
রাজধানীর উত্তরার একটি পরিবারের ৫ জন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত। তারা সবাই উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
হাসপাতালটি এখন ডেঙ্গু রোগীতে পরিপূর্ণ। অথচ এই হাসপাতালের কোনো তথ্য নেই স্বাস্থ্য অধিদফতরে। যদিও ডেঙ্গুর সব ধরনের তথ্য দৈনন্দিন ভিত্তিতে অধিদফতরে দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর প্রতি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল শাখা থেকে নিবন্ধিত রাজধানীর ১৯২টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ২৩টি ডেঙ্গুর তথ্য প্রদান করে, যা রাজধানীর মোট বেসরকারি হাসপাতালের মাত্র ৮ ভাগ। এই ২৩টি হাসপাতালে জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ৩ হাজার ৩৪৮ জন ডেঙ্গু-আক্রান্ত রোগী। তাহলে ১৯২টি হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৬ হাজার ৭৮৪ জন। একইভাবে বেড়ে যাবে মৃতের সংখ্যাও।
প্রতিদিন ডেঙ্গু-আক্রান্ত রোগীদের সঠিক তথ্য দিতে রাজধানীসহ সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ডেঙ্গুজ্বরের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এ তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একাধিকবার নির্দেশনার পরও তথ্য দিচ্ছে না বেসরকারি হাসপাতালগুলো। ফলে ডেঙ্গু-আক্রান্ত রোগী এবং এ রোগে মৃতের সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার যুগান্তরকে বলেন, ডেঙ্গুজ্বরের তথ্য প্রদানের জন্য রাজধানীর সব হাসপাতালেই আমাদের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতাল তথ্য পাঠাচ্ছে না। ফলে ডেঙ্গুর প্রকৃত অবস্থা জানা সম্ভব হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল শাখার তথ্যমতে, রাজধানীতে নিবন্ধিত ১৯২টি বেসরকারি হাসপাতাল ছাড়াও আবেদিত হাসপাতালের সংখ্যা ৭০টি। এর বাইরে অলিগলিতে অনেক ক্লিনিক বা হাসপাতাল রয়েছে, যার হিসাব নেই অধিদফতরে। যদি সব বেসরকারি হাসপাতালগুলো নিয়মিত ডেঙ্গুর তথ্য প্রদান করত তাহলে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য নিরূপণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হতো।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে, সঞ্চালনশীল কোনো সংক্রামক রোগ যদি প্রতি বছর নির্দিষ্ট মৌসুমে নির্দিষ্ট এলাকার জনগোষ্ঠীর ওপর সংক্রমণ ঘটায় তাহলে অবশ্যই বছরব্যাপী ক্লিনিক্যাল, সেরো ও ভেক্টর সার্ভিলেন্স করতে হবে। সেটি করা না হলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার প্রতি অবহেলা করা হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, গত কয়েক বছর যদি সারা দেশে বছরব্যাপী ডেঙ্গু সার্ভিলেন্স করা হতো এ বছর এমন পরিস্থিতি নাও হতে পারত। তারা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষে ডেঙ্গুর সঠিক অবস্থান নিরূপণ সম্ভব নয়। কিন্তু সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বলা যায়, ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়ে হয়তো মহামারী আকার ধারণ করতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার প্রোগ্রাম ম্যানেজার (ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু কন্ট্রোল) ডা. এমএম আক্তারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ইতিমধ্যে ১০ দিনব্যাপী একটি সার্ভিলেন্স শুরু হয়েছে। এটি শেষ হলে আমরা নতুন তথ্য পাব। এছাড়া ডেঙ্গু চিকিৎসায় ইতিমধ্যে ২ হাজার চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে চলতি মাসের গত ২১ দিনে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩৩৩ জন। গত এক জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মোট ভর্তি হয়েছে ৬ হাজার ৫৪৪ জন। যার মধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৪ হাজার ৯৮১ জন। বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন ১৫৫৮ জন। এ পর্যন্ত এ রোগে মৃত্যু ঘটেছে ৫ জনের। হাসপাতালে একদিনে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে গত ১৫ জুলাই ৩১১ জন। তবে ১০ জুলাই থেকে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২৫০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সামগ্রিক বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা যুগান্তরকে বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে বারবার বলার পরও তারা ডেঙ্গুর রিপোর্ট প্রদান করছে না। তিনি বলেন, এখন হয়তো এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। ডেঙ্গু চিকিৎসায় ও ব্যবস্থাপনায় অধিদফতরের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়েছে।

No comments:
Post a Comment