জাতীয় সংসদে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : ফোকাস বাংলা |
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে পাস হলো ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল-২০০০’। এতে বিদ্যমান আইনে থাকা ‘ধর্ষিতা’ শব্দটির বদলে ‘ধর্ষণের শিকার’ শব্দ যুক্ত করা হয়েছে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা গতকাল মঙ্গলবার সংসদে বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
ধর্ষিতা শব্দটি লিঙ্গ বৈষম্যের পরিচায়ক বলে বিভিন্ন সময়মতো আসার প্রেক্ষাপটে বিলে ‘ধর্ষণের শিকার’ শব্দবন্ধ দিয়ে ‘ধর্ষিতা’ শব্দটি প্রতিস্থাপনের সুপারিশ করেছিল সংসদীয় কমিটি। মূল আইনের ৯ (২) ধারাসহ কয়েক জায়গায় ‘ধর্ষিতা’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘ধর্ষণের শিকার’ শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে।
দেশ জুড়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনবিরোধী আন্দোলন এবং ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। সংসদ অধিবেশন না থাকায় সংশোধিত আইন কার্যকর করতে গত ১৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০০০’ জারি করেন। পরে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী ৮ নভেম্বর আইনে পরিণত করতে অধ্যাদেশটি সংসদে তোলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। একইদিনে সেটি বিল আকারে সংসদে তোলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। পরে পরীক্ষা করে সংসদে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বিলটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন
দমন আইনের ৯ (১) উপধারায় বলা ছিল ‘যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।’ বিলে মূল আইনের খসড়ার ৯ (১) উপধারায় ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
আইনের ৯ (৪) (ক) উপধারায় ছিল ‘যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহলে ঐ ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।’ এই উপধারা সংশোধন করে পাশ হওয়া বিলে ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’-এর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলো যোগ করা হয়েছে।
আকাশপথে দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতিপূরণ ছয়গুণ
আকাশপথে পরিবহনের সময় দুর্ঘটনায় যাত্রী আহত বা নিহত হলে এবং ব্যাগেজ নষ্ট বা হারিয়ে গেলে প্রায় ছয়গুণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান রেখে গতকাল সংসদে একটি বিল পাশ হয়েছে। বিদ্যমান আইনে আকাশপথে পরিবহনের সময় যাত্রীর মৃত্যু বা আঘাতপ্রাপ্ত হলে ক্ষতিপূরণ ছিল ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা। নতুন আইনে সেটা বাড়িয়ে ১ কোটি ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩৩৪ টাকা হয়েছে। গতকাল সংসদে এ সম্পর্কিত ‘আকাশপথে পরিবহন (মন্ট্রিল কনভেনশন) বিল-২০২০’ বিলটি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী পাশের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাশ হয়।
নতুন আইন কার্যকর হলে ফ্লাইট বিলম্বের কারণে পরিবহনকারীর দায় ২০ ডলারের পরিবর্তে ৫ হাজার ৭৩৪ ডলার, ব্যাগেজ বিনষ্ট বা হারানোর জন্য প্রতি কেজিতে ২০ ডলারের পরিবর্তে ১ হাজার ৩৮১ ডলার এবং কার্গো বিমানের মালামাল বিনষ্ট বা হারানোর জন্য প্রতি কেজিতে ২০ ডলারের পরিবর্তে ২৪ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।
যাত্রীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে তার সম্পত্তির বৈধ প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিদের মধ্যে এ আইনের বিধানের আলোকে ক্ষতিপূরণের অর্থ ভাগ করা যাবে। সংশ্লিষ্ট উড়োজাহাজ পক্ষ বা বিমাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে অথবা আদালতের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যাবে।
No comments:
Post a Comment