![]() |
| তিস্তার পানি বেড়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ হাজার পরিবার। ছবি: ইত্তেফাক |
ভারত থেকে আসা পানির ঢলে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাতে তা বিপদসীমার অতিক্রম করবে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। রংপুরের কাউনিয়া, গঙ্গাচড়া, পীরগাছা উপজেলার প্রায় শতাধিক নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের গ্রাম গুলোতে পানি ঢুকে বন্যা দেখা দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
শুক্রবার সকালে তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার (৫২.৬০ সে.মি) ২৩ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী আমিনুর রহমান। রাতে এই তিন উপজেলায় ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে রংপুর জেলা প্রশাসন।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুর হক জানান, উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢল ও কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে নদীর পানির প্রবল স্রোতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। ব্যারাজ এলাকার ভাটির চরাঞ্চলের গ্রাম গুলোতে বন্যা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া, শহীদবাগ, হারাগাছ ও টেপামধুপুর ইউনিয়নের ৪০টি গ্রামে বন্যার পানি ঢুকে কয়েক হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন। গঙ্গাচড়া উপজেলার নদীর তীরবর্তী লহ্মীটারী ইউনিয়নের চর শংকরদহ, চর ইচলী, বাগেরহাট, জয়রামওঝা, ইসবকুল গ্রামের ১০ হাজার পরিবার ও আলমবিদিতর ইউনিয়নের সাউথপাড়া, পাইকান, ব্যাংকপাড়া, হাজীপাড়া, আলমবিদিতর গ্রামের পাঁচশ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কোলকোন্দ ইউনিয়নে চিলাখাল বেড়ি বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে পাটসহ বিভিন্ন সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
কাউনিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. উলফৎ আরা বেগম বলেন, বন্যার ব্যাপারে সরকারিভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে।
এদিকে রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান, ৪৮ ঘন্টায় রংপুরসহ আশপাশ এলাকায় ১৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন অলিগলি প্লাবিত হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।
পীরগাছা (রংপুর) সংবাদদাতা জানান, তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিতসহ তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিস্তা নদীর ভাঙনে পাঁচটি গ্রাম, দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ এবং একটি ক্লিনিক হুমকির মুখে পড়েছে। ভাঙন রোধে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এসব এলাকার লোকজন আতঙ্কে রয়েছেন।
উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর পাড়ে অবস্থিত গাবুড়ার চর, শিবদের চর, কিশামত ছাওলা, পূর্ব হাগুরিয়া হাশিম, ছাওলা ও চর কাশিম গ্রাম তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে। এ অঞ্চলে গত ৫ বছরে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমিসহ প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পরিবারের বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ জানান, বন্যার কারণে সদ্য রোপনকৃত আউশ ধান ও আমন বীজতলাসহ প্রায় ১৫ হেক্টর জমির রবি শস্য পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলোর তালিকা করা হচ্ছে। তাদের সহযোগিতা করা হবে।
এদিকে রংপুর জেলা প্রশাসক, ডি.ডি.এস.ডি ফরহাদ হোসেন জানান, বন্যা কবলিত মানুষদের জন্য তিন উপজেলায় ৫০ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে সরকারী ভাবে যে কোনো পরিস্তিতি মোকাবেলা করা হবে।

No comments:
Post a Comment