AdSense

Tuesday, July 30, 2019

আমাদের আদেশের পর সিটি করপোরেশনের ঘুম ভেঙেছে : হাইকোর্ট

আমাদের আদেশের পর সিটি করপোরেশনের ঘুম ভেঙেছে : হাইকোর্ট
হাইকোর্ট। ফাইল ছবি

এডিস মশা নির্মূলে দুই সিটি করপোরেশনের ভূমিকায় আবারও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে মশা নিধনে নতুন ওষুধ কবে দেশে আনা হবে সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য এফিডেভিট আকারে আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে। বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।

দুই সিটি করপোরেশনের আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মশা নিধন কার্যক্রম জোরদার করা উচিত ছিলো। কিন্তু আপনারা তা করেননি। আমাদের (আদালত) রুল জারির পর আপনাদের ঘুম ভেঙেছে। তারপর উল্টাপাল্টা বলতে লাগলেন। পরে সরকারের ধমক খেয়ে চুপ হলেন।’
আদালত বলেন, ‘কেউ যদি জেগে ঘুমায়, তাকে জাগানো যায় না। দুই সিটি করপোরেশনের অবস্থা হয়েছে সেরকম। মশা নিধনের বিষয়টি আপনারা সিরিয়াসলি (গুরুত্ব সহকারে) নিচ্ছেন না।’
গত ২৫ জুলাই সিটি করপোরেশনের আইনজীবীরা হাইকোর্টকে জানিয়েছিলেন যে, ওষুধের ডোজ বাড়িয়ে এডিস মশা নির্মূল করতে চায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। কারণ এখন যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে তাতে দুর্বল হয়ে মশা নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। কিন্তু মশা নির্মূল হচ্ছে না। ফলে ওষুধের ডোজ বাড়িয়ে দিলে মশা নির্মূল হবে। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তিনদিন সময় দেন আদালত।
রাইফেল আছে গুলি নেই তিন দিনে উত্তর সিটি করপোরেশনের গৃহীত কার্যক্রম আদালতে তুলে ধরেন আইনজীবী তৌফিক ইনাম টিপু। তিনি বলেন, ‘মশা নিধনে প্রতি ওয়ার্ডে লোকবল বাড়ানো হয়েছে।’
এ কথার পর আদালত বলেন, ‘আমাদের ধারণা, যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। এজন্য বিভিন্ন মহল থেকে অধিক কার্যকর ওষুধ ছিটানোর কথা বলা হচ্ছে। আপনার রাইফেল আছে, গুলি নেই। এমন রাইফেল থেকে কি লাভ?’
আইনজীবী বলেন, ‘চীন থেকে ওষুধ আনা হবে। সিটি করপোরেশন সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে মশা নিধনে।’
আদালত বলেন, ‘আপনাদের এই কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।’
আইনজীবী বলেন, ‘সারা বছরই মশা নিধন কার্যক্রম চলে। এখন মশার প্রকোপ বেড়েছে।’
আদালত প্রশ্ন করেন, ‘সারা বছর কার্যক্রম চললে প্রকোপ বাড়বে কেন?’
আইনজীবী বলেন, ‘নতুন একটি ওষুধ আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ হয়তো লাইসেন্সটা পেয়ে যাবে। ১/২ সপ্তাহের মধ্যে হয়তো ওষুধ চলে আসবে। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে বিষয়টি মনিটর করা হচ্ছে।’
আদালত বলেন, ‘ভারতেও ওষুধ রয়েছে। সেখান থেকে দ্রুত ওষুধ আনা যেতে পারে।’
দেশের মশা কে মারবে? রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মাইনুল হাসানকে আদালত প্রশ্ন করেন, ‘ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর বিস্তার লাভ করছে। এ ব্যাপারে সরকার কি করছে? আমরা কি প্রত্যেক দপ্তরের লোকদের ডেকে এনে তাদের বক্তব্য শুনবো?’
ডিএজি বলেন, ‘ডেঙ্গু বর্তমানে যে আকার ধারণ করেছে তাতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে নিয়ন্ত্রণে রাখার। এই প্রচেষ্টা গ্রহণ করা না হলে আরও বড় আকার ধারণ করতো। তবে পুরনো ওষুধ যথেষ্ট কার্যকর নয়। এর পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে।’
আদালত বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বলছেন- ঢাকার মশা মারবে সিটি করপোরেশন- তাহলে দেশের মশা কে মারবে? আমরা নতুন ওষুধ ক্রয় নিয়ে কোন দপ্তর বা বিভাগের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি দেখতে চাই না।’
সরকার ওষুধ এনে দিলে ভালো হয় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, ‘বর্তমান অবস্থায় সরকার দুই সিটি করপোরেশনকে নতুন ওষুধ এনে দিলে ভালো হয়। তাহলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকবে না।’
আদালত প্রশ্ন করেন, ‘ওষুধের ডোজ বাড়ানোয় মশা মরেছে?’
আইনজীবী বলেন, ‘মনে হয় কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ফলাফল পেতে আরও সময় লাগবে।’
আদালত বলেন, ‘হাসপাতালে যে হারে প্রতিদিন রোগী ভর্তি হচ্ছে তাতে বোঝা যায় অবস্থার কি উন্নতি হয়েছে! ওষুধ কতটা কার্যকর হচ্ছে!’

No comments:

Post a Comment